এমি অ্যাওয়ার্ডে ফিলিস্তিনের পক্ষে তারকাদের জোরালো বার্তা: বারদেমের কেফিয়াহ ও হান্না আইনবাইন্ডারের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান

এমি অ্যাওয়ার্ডে ফিলিস্তিনের পক্ষে তারকাদের জোরালো বার্তা: বারদেমের কেফিয়াহ ও হান্না আইনবাইন্ডারের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান


এমি অ্যাওয়ার্ডসে ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন বিখ্যাত তারকারা। স্প্যানিশ অভিনেতা জাভিয়ের বারদেম কেফিয়াহ পরে এবং ইহুদি অভিনেত্রী হান্না আইনবাইন্ডার ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিয়ে গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এই তারকাদের সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত জানুন।


ভূমিকা

বিশ্বজুড়ে বিনোদন অঙ্গনের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার এমি অ্যাওয়ার্ডসের এবারের আয়োজন ছিল একেবারেই অন্যরকম। ঝলমলে পোশাক আর তারকারদের ভিড়ের মাঝে এবারের আসরে বারবার উঠে এসেছে গাজার হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। এক দিকে স্প্যানিশ অভিনেতা জাভিয়ের বারদেম কেফিয়াহ পরে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন, আর অন্যদিকে ইহুদি অভিনেত্রী হান্না আইনবাইন্ডার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তুলেছেন 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' স্লোগান। এই দুই তারকার সাহসী পদক্ষেপ গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।


এমি অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চে গাজা প্রসঙ্গ

ইসরায়েলের গাজায় চালানো নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বের হাজার হাজার শিল্পী ও নির্মাতা সোচ্চার হয়েছেন। তাই এমির মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই প্রসঙ্গটি উঠে আসাটা অস্বাভাবিক ছিল না। এবারের আসরে লিমিটেড সিরিজ বিভাগে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন অস্কারজয়ী অভিনেতা জাভিয়ের বারদেম। পুরস্কার না জিতলেও তিনি মঞ্চকে তার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেছে নেন।

এমির রেড কার্পেটে ইউএসএ টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বারদেম বলেন, "মনোনয়ন পেয়ে ভালো লাগছে, তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের মনোযোগ এমন একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া, যেখানে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন—আর সেই জায়গাটি হলো গাজা।"

কেন তিনি এত দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, "প্রশ্নটা হওয়া উচিত—আমরা কেন সবাই নই? মানুষের বিবেক জাগ্রত হওয়ার আগে আমাদের আরও কত শত বা হাজার শিশুর মৃত্যু দেখতে হবে?" তার এই মন্তব্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও মর্মস্পর্শী।


ইহুদি অভিনেত্রীর জোরালো ভাষণ

এবারের এমির আসরে সবাইকে সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছেন অভিনেত্রী হান্না আইনবাইন্ডার। কমেডি সিরিজে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এটি ছিল তার টানা চতুর্থ মনোনয়ন এবং প্রথম জয়।

পুরস্কার গ্রহণের পর তার ভাষণে প্রথমে কৌতুক ছিল। তিনি বলেন, "আমি ভেবেছিলাম বারবার হেরে যাওয়াটা বেশি কুল। কিন্তু জয়ও কুল!" এরপরই তিনি মঞ্চ কাঁপিয়ে দেন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিয়ে। যদিও তার বলা একটি অশ্লীল শব্দ সম্প্রচারে মিউট করা হয়, কিন্তু "ফ্রি প্যালেস্টাইন" বার্তাটি পরিষ্কারভাবে শোনা যায়।

পরে প্রেসরুমে সাংবাদিকদের কাছে হান্না এই বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, "ফিলিস্তিন ইস্যু আমার হৃদয়ের খুব কাছের। আমার গাজায় বন্ধু আছে, যারা উত্তর গাজায় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছে, গর্ভবতী নারী ও শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছে, শরণার্থী শিবিরে স্কুল তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাই এই বিষয়ে কথা বলা আমার দায়িত্ব।"

তিনি আরও বলেন, "একজন ইহুদি হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো ইহুদিদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ইসরায়েল রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে দেখানো। আমাদের ধর্ম আর সংস্কৃতি শত শত বছরের প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যেটা এই জাতি-ভিত্তিক রাষ্ট্রের সঙ্গে এক নয়।"


অন্যান্য তারকাদের সংহতি

শুধুমাত্র জাভিয়ের বারদেম বা হান্না আইনবাইন্ডার নন, আরও অনেক তারকা এমি অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চে গাজার প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেছেন। ‘হ্যাকস’ সিরিজের হান্নার সহশিল্পী মেগান স্টলটারও "আর্টিস্ট ফর সিজফায়ার" লেখা পিন পরে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও, 'প্রিজিউম ইনোসেন্ট'-এর তারকা রুথ নেগা, 'দ্য হোয়াইট লোটাস'-এর অভিনেত্রী এইমু লু উড, এবং 'অ্যাবট এলিমেন্টারি'-এর অভিনেতা ক্রিস পারফেটি-কেও একই ধরনের পিন পরে দেখা গেছে। এই তারকাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে বিশ্বজুড়ে শিল্পীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার।


অতিরিক্ত: এমির মঞ্চে তারকাদের প্রতিবাদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • বিশাল দর্শক: এমি অ্যাওয়ার্ডসের মতো অনুষ্ঠানগুলো সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ দেখে। যখন একজন তারকা এই মঞ্চে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেন, তখন সেই বার্তা খুব দ্রুত অনেক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
  • দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: অনেক সময় সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন থাকে না। যখন তাদের প্রিয় তারকারা কোনো ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন, তখন তারা সেই বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
  • সংহতি ও চাপ তৈরি: তারকাদের এই ধরনের প্রতিবাদ বিশ্বনেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। এটি ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি বিশ্বব্যাপী সংহতি বাড়াতে সাহায্য করে।
  


©Author: TendingGB

           

Release date: 15 Sep 2025

Post a Comment

0 Comments